সর্বশেষ আপটেড

বাংলাদেশে বসবাসকারী নৃগােষ্ঠী এবং তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা

আজকের আলোচনায় থাকছে মানবিক বিভাগ এইচএসসি ২০২১ ৬ষ্ঠ সপ্তাহ সমাজবিজ্ঞান অ্যাসাইনমেন্ট এর নমুনা সমাধান/ উত্তর।উক্ত আর্টিকেল পর্যালোচনা শেষে এইচএসসি ২০২১ এর মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থীরা ৬ষ্ঠ সপ্তাহের সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবে এবং অ্যাসাইনমেন্টটি সুন্দরভাবে সমাধান করতে পারবে। অ্যাসাইনমেন্টের নির্ধারিত শিরোনাম- বাংলাদেশে বসবাসকারী নৃগােষ্ঠী এবং তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা।

এইচএসসি ২০২১ ৬ষ্ঠ সপ্তাহ সমাজবিজ্ঞান অ্যাসাইনমেন্ট

অ্যাসাইনমেন্ট : বাংলাদেশে বসবাসকারী নৃগােষ্ঠী এবং তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা।

নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি):

১. নৃগােষ্ঠীর ধারণা ও প্রকৃতি লিখতে হবে বাংলাদেশের মগ/ মারমা নৃগােষ্ঠীর উৎপত্তি ও পরিচয় বর্ণনা অ।করতে হবে।

২. বাংলাদেশের মগ/ মারমা নৃগােষ্ঠীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারার বিবরণ দিতে হবে।

৩. বাংলাদেশের মনিপুরী নৃগােষ্ঠীর উৎপত্তি ও পরিচয় বর্ণনা করতে হবে।

৪. বাংলাদেশের মনিপুরী নৃগােষ্ঠীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারার বিবরণ দিতে হবে।

এইচএসসি ২০২১ এর মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থীরা ৬ষ্ঠ সপ্তাহের সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর

ক) নৃগোষ্ঠীর ধারণা ও প্রকৃতিঃ

নৃগোষ্ঠীর ধারণা Concept of Race-

নৃগোষ্ঠী (Race) বলতে জৈবিক ও দৈহিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মানবপ্রজাতির একেকটি উপবিভাগকে বোঝায়। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্ন অর্থে নৃগোষ্ঠী প্রত্যয়টি ব্যবহার করেছেন। ব্রিটিশরা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী বোঝাতে এ প্রত্যয় ব্যবহার করেছে। যেমন- আইরিশ রেস, স্কটিশ রেস ইত্যাদি। আবার প্রত্নতাত্ত্বিকরা কোনো বিশেষ মানবগোষ্ঠীকে বোঝাতে এই প্রত্যয়টি ব্যবহার করেছেন। তবে ইউরোপ ও আমেরিকায় রেস শব্দটি বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ। ‘রেস’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হলো নৃগোষ্ঠী বা নরগোষ্ঠী।উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত কতকগুলো সাধারণ দৈহিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সৃষ্ট মানবজাতির উপবিভাগ হলো নৃগোষ্ঠী।

নির্দিষ্ট দৈহিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মানবজাতিকে কয়েকটি উপবিভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বিবেচ্য দৈহিক বৈশিষ্ট্যগুলো হলো- মাথার চুলের ধরন, মাথার আকৃতি, নাকের ধরন, চোখের গঠন ও চোখের মণির রং, চোখের ভ্রু, মুখমণ্ডলের গঠন, ঠোটের প্রকৃতি, গায়ের রং কানের প্রকৃতি, কপালের গঠন, দৈহিক উচ্চতা ইত্যাদি। নৃবিজ্ঞানীরা উপর্যুক্ত দৈহিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সমগ্র পৃথিবীর মানবগোষ্ঠীকে চারটি উপবিভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা- ককেশীয় বা শ্বেতকায় (Caucasoid), মঙ্গোলীয় বা বাদামি (Mongoloid), নিগ্ৰীয় বা কৃষ্ণকায় (Negroid) এবং অস্ট্রালয়েড (Australoid) | সমাজবিজ্ঞানী ও নৃবিজ্ঞানীগণ নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন, যা নিচে তুলে ধরা হলো

সমাজিক নৃবিজ্ঞানী ই. বি. টেইলর (E. B. Tylor)-এর মতে, “নৃগোষ্ঠী হলো স্বাতন্ত্র্যসূচক এবং উত্তরাধিকার সূত্রে বর্তায় এমন দৈহিক বৈশিষ্ট্যাবলির সমন্বয়ে গঠিত মানবজাতির একটি প্রধান বিভাগ।” নৃবিজ্ঞানী মেয়ার (Mayer)-এর মতে, “An aggregate of phenotypically similar populations of a species, inhabiting a geographic subdivision of the range of a species and differing taxonomically from other populations of the species.” অর্থাৎ, নৃগোষ্ঠী হলো একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় বসবাসকারী এমন একদল মানুষ, যাদের মধ্যে সাধারণ দৈহিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান এবং যারা অন্যদের থেকে দৈহিক বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে ভিন্ন।

বাংলাদেশে বসবাসকারী নৃগােষ্ঠী এবং তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা

সমাজবিজ্ঞানী শেপার্ড (Shepard)-এর মতে, “নৃগোষ্ঠী হলো জনসংখ্যার সেই এক বিশেষ অংশ যারা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত কতগুলো নির্দিষ্ট দৈহিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।”

সমাজবিজ্ঞানী আর.টি. শেফার (R. T. Schafer) তার ‘Sociology’ গ্রন্থে বলেছেন, “Race is a group which is set apart from others because of obvious physical difference.” অর্থাৎ, নৃগোষ্ঠী হলো একটি দল, যারা শারীরিক ভিন্নতার জন্য অন্যদের চেয়ে আলাদা। সমাজবিজ্ঞানী Robertson তার ‘Sociology’ গ্রন্থে বলেন, “. Those who share similar cultural trails are socially defined as an ethnic group.” অর্থাৎ যারা অভিন্ন সাংস্কৃতিক রেণু ধারণ করে তাদের সামাজিকভাবে এথনিক গোষ্ঠী হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

নৃবিজ্ঞানী জে. বি. এস. হলচেন (J. B.S. Holchan) বলেছেন, “We define a race as a people who normally breed together and who differ from other peoples as regards interited physical character which are found in all members of the race. অর্থাৎ, নৃগোষ্ঠীকে আমরা একটি জনগোষ্ঠীরূপে সংজ্ঞায়িত করতে পারি, যারা সাধারণত একই বংশের এবং যারা উত্তরাধিকার সূত্রে অন্যান্য জনগোষ্ঠী থেকে দৈহিক বৈশিষ্ট্যে ভিন্ন এবং যাদের দেখতে একই রকম মনে হয়।

‘Introduction to Sociology’ গ্রন্থ অনুযায়ী, “A race is a human population that is believed to be distinct in some way from other human based on real or imagined physical differences.” অর্থাৎ, নৃগোষ্ঠী হলো একটি মানব জনগোষ্ঠী, যারা বিশ্বাস করে যে তারা অন্যান্য মানবগোষ্ঠী থেকে বাস্তবিক অথবা কল্পিত শারীরিক ভিন্নতার ভিত্তিতে স্বতন্ত্র।

সুতরাং নৃগোষ্ঠী হলো এমন একটি জনসমষ্টি, যারা উত্তরাধিকারসূত্রে নির্দিষ্ট কতগুলো দৈহিক বৈশিষ্ট্য লাভ করে, যা তাদের অন্যান্য নৃগোষ্ঠী থেকে পৃথক করে।নৃগোষ্ঠীর প্রকৃতি

রেসের প্রকৃতি

মানবপ্রজাতির অন্যতম প্রধান উপবিভাগ হলো বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী। এই উপবিভাগের প্রত্যেকটি সদস্য সাধারণ কিছু দৈহিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়, যা সকলের দৃষ্টিগোচরে আসে। এসব দৈহিক বৈশিষ্ট্য তারা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়। আবার তা বংশপরম্পরায় পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে বর্তায়। একটি মানবগোষ্ঠীকে সহজেই উক্ত সাধারণ দৈহিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে অন্যান্য মানবগোষ্ঠী থেকে পৃথক করা সম্ভব হয়।

নিচে মানবপ্রজাতির প্রধান চারটি নৃগোষ্ঠীর দৈহিক বৈশিষ্ট্যের আলোকে তাদের স্বরূপ তুলে ধরা হলো ককেশীয় বা শ্বেতকায় (Caucasoid) ককেশীয় নৃগোষ্ঠীর মাথার আকৃতি দুই ধরনের হয়। গোলাকার মাথার আকৃতিবিশিষ্ট ককেশীয়রা হলো- আর্মেনীয় আলপাইন ও দিমারীয়। আর লম্বা মাথাবিশিষ্ট ককেশীয়রা হলো- নর্ডিক, দ্রাবিড় ও মেডিটেরিয়ান। ককেশীয়দের মুখাকৃতি সরু বা লম্বাকৃতির হয়, নাক মূলত চিকন, লম্বা ও খাড়া হয়। এদের ঠোঁট পাতলা ও চিকন, চোখের গঠন ও আকৃতি স্বাভাবিক তবে চোখের রং হালকা থেকে কালো বাদামি।

আবার চোখের মণি অনেকের নীল এবং কারও কারও ধূসর প্রকৃতির হয়। এদের কান স্বাভাবিক অর্থাৎ বেশি চওড়া নয়, আবার বেশি লম্বাও নয়। এদের চুলের রং বাদামি বা সোনালি হয়। কালো চুলের ককেশীয়ও অনেক দেখা যায়। এছাড়া চুল খাড়া থেকে কোঁকড়ানো দেখা যায়। তবে এদের চুল, দাড়ি ও গায়ে লোমের প্রাচুর্য আছে। এদের গায়ের রং সাদা ও সাদা-লালচে হয়। তবে বাদামি ও কালো বাদামি ককেশীয়ও একেবারে কম নয়। বিশেষ করে দ্রাবিড়দের গায়ের রং কালো হয়। ককেশীয়রা সাধারণত লম্বা দেহের অধিকারী হয়ে থাকে। এদের দেহ বলিষ্ঠ, সুঠাম ও শক্তিশালী হয়। তবে মধ্যমাকৃতির ককেশীয়ও দেখা যায়। ককেশীয় নৃগোষ্ঠীর মূল বাসস্থান ইউরোপ, আমেরিকা, উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় রয়েছে।

মঙ্গোলীয় বা বাদামি (Mongoloid) :

মঙ্গোলীয়দের মাথার আকৃতি অধিকাংশ গোলাকার। তবে আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের মাথা কিছুটা চওড়া, গোলাকার ও খর্বাকৃতির। এদের মুখ ও গালের চামড়া পুরু এবং মুখমণ্ডল কিছুটা সমতল (Flat) প্রকৃতির। মঙ্গোলীয়দের নাক অনুচ্চ, মোটা ও ক্ষুদ্রাকৃতির। এদের কান তুলনামূলকভাবে লম্বা ও সরু। এদের ঠোঁট মাঝারি প্রকৃতির। ককেশীয়দের ন্যায় ঠোঁট অতটা পাতলা নয় তবে নিগ্রোদের তুলনায় অনেক পাতলা। মঙ্গোলীয়দের চোখের রং কালো বাদামি থেকে ঘোর কালো। এদের চোখ আকারে ছোট, চোখের পাতা একটু মোটা ও টান টান মঙ্গোলীয়দের চোখে বিশেষ ধরনের ভাঁজ রয়েছে, যাকে এপিক্যানথিক ফোল্ড (Epicanthic fold) বলা হয়। চোখের এই ভাজ অন্য কোনো নৃগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা যায় না।

মঙ্গোলীয়দের চুল কালো। তবে অনেকের মধ্যে কালো বাদামি চুলের প্রভাবও পরিলক্ষিত হয়। এদের চুল মোটা, সোজা ও খাড়া খাড়া মুখে ও গায়ে লোমের পরিমাণ কম দাড়ি-গোঁফ নেই বললেই চলে। এদের তুকের রং বাদামি বা তামাটে প্রকৃতির, দৈহিক উচ্চতা মধ্যমাকৃতির। তবে কিছু মঙ্গোলীয় খর্বাকৃতির হয়ে থাকে। আমেরিকান মঙ্গোলীয়দের উচ্চতা বেশি হয়। পৃথিবীতে মঙ্গোলীয় নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা সর্বাধিক। বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মঙ্গোলীয় নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া মধ্য, উত্তর ও পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার ইন্ডিয়ান জনগোষ্ঠী মঙ্গোলীয় নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এদের মধ্যে কয়েকটি উপবিভাগ রয়েছে। যেমন- এশীয় মঙ্গোলীয়, ওসেনীয় মঙ্গোলীয়, আমেরিকান ইন্ডিয়ানস ইত্যাদি।

কাজ : মঙ্গোলীয়দের এমন একটি বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত কর যা অন্যদের নেই। নিৰ্মীয় বা কৃষ্ণকায় (Negroid) নিগ্রো জনগোষ্ঠীর অধিকাংশের মাথা লম্বাকৃতির, চওড়া এবং কিছুটা উঁচু প্রকৃতির। তাদের মুখাকৃতি লম্বা তবে সরু নয়। মঙ্গোলীয়দের তুলনায় লম্বা ও সরু আকৃতির মুখমণ্ডল। এদের কপালের গড়ন উল্লম্বী (Vertical) প্রকৃতির হয়। নিগ্রোদের নাক চওড়া, মাংসল ও বেশ অনুন্নত। এদের নাকের উপরিভাগ এবং নাসারন্ত্রের দু’পাশ বেশ প্রশস্ত। নিগ্রোদের কান তুলনামূলকভাবে ছোট এবং প্রশস্ত। এদের চোখের রং কালো বা কালো বাদামি এবং চোখের গঠন স্বাভাবিক।

বাংলাদেশে বসবাসকারী নৃগােষ্ঠী এবং তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা

নিগ্রোদের ঠোঁটের গঠন অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর তুলনায় ভিন্ন নিগ্রোদের ঠোঁট মোটা, পুরু ও ওল্টানো প্রকৃতির এবং ঠোঁট সামনে বের হয়ে স্ফীত হয়ে থাকে। এদের চুল কালো বা কালো বাদামি, ঘন, মোটা এবং কোঁকড়ানো হয়। তাদের মুখে দাড়ি-গোঁফের পরিমাণ কম নিগ্রোদের গায়ের রং ঘোর কালো বর্ণের। তবে কখনো কখনো বাদামি বর্ণের নিগ্রোও দেখা যায়। এদের উচ্চতা মধ্যমাকৃতির ও লম্বাকৃতির অধিক পরিলক্ষিত হয়। তবে খর্বাকৃতির নিয়োও দেখা যায়। এদের দেহের গঠন শক্ত, সুঠাম ও বলিষ্ঠ।

নিগ্রোদের আদি বাসস্থান পশ্চিম আফ্রিকার সাভানা অঞ্চলে। বর্তমানে আফ্রিকা মহাদেশে বিশেষ করে সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে নিগ্রোদের প্রধান আবাসভূমি। এছাড়া আমেরিকা ও মেলানেশিয়ায় বেশ কিছু নিগ্রো জনগোষ্ঠী বসবাস করে। নিগ্রোদের মধ্যে কয়েকটি উপবিভাগ রয়েছে যেমন আফ্রিকান নিগ্রো, ওসেনীয় নিগ্রো ও নেগ্রিটো ইত্যাদি উপবিভাগ।অস্ট্রালয়েড (Australoid) অস্ট্রালয়েডদের মুখাকৃতি লম্বা এবং মাথাও লম্বাকৃতি এদের নাক প্রশস্ত ও মাংসল ঠোঁট মোটা, চোখের গঠন স্বাভাবিক ও চোখের মণি কালো গাত্রবর্ণ কালো বাদামি ও চকোলেট রঙের এবং চুল কালো ও ঢেউ খেলানো হয়।

এদের শরীরে অনেক লোম থাকে। এদের দুটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর মধ্যে নেই, তা হলো নিচু কপাল এবং চোখের ভ্রুর হাড়দ্বয় উঁচু ও ভ্রুতে লোমের প্রাচুর্য। নৃবিজ্ঞানীগণ এই নৃগোষ্ঠীকে দুটি প্রধান উপবিভাগে ভাগ করেছেন। যথা- আদি-অস্ট্রালয়েড (Proto Australoid) ও ইন্দো-অস্ট্রালয়েড (Indo-Australoid) অস্ট্রেলিয়ার আদিম অধিবাসী, ভারতীয় উপমহাদেশের সাঁওতাল, ওঁরাও প্রভৃতি আদিবাসী ও জাপানের আইমু জনগোষ্ঠী এই নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। অধিকাংশ নৃবিজ্ঞানীই অস্ট্রালয়েডদের পৃথক নৃগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তবে কতিপয় নৃবিজ্ঞানী এদের পৃথক নৃগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আপত্তি করেন। তারা মনে করেন, এদের দৈহিক বৈশিষ্ট্যাবলির সঙ্গে উপর্যুক্ত ককেশীয় ও নিগ্রোয়েড নৃগোষ্ঠীর অনেক সাদৃশ্য রয়েছে।

খ) মগ বা মারমা নৃগোষ্ঠীর উৎপত্তি ও পরিচয়ঃ

মগ

মারমাদের উৎপত্তি। মারমারা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। মারমাদের আদিবাস পেশু শহরে ছিল। ঐতিহাসিক সূত্রমতে, ১৯১৪ সালে আরাকান শাসিত চট্টগ্রাম অঞ্চলে মারমাদের পূর্বপুরুষের প্রথম আগমন ঘটে।” মারমাদের পূর্বপুরুষ হলো ‘মোন’ বা ‘মোয়ে’ বংশজাত। তবে ইংরেজ ও বাঙালিরা পূর্বে তাদের ‘মগ’ বলে উল্লেখ করত চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠীর লোকেরাও মারমাদেরকে ‘মগ’ নামে অভিহিত করত। কিন্তু মারমারা নিজেদের কখনো ‘মগ’ নামে পরিচয় দেয় না। মারমাদের ভাষায় কিংবা বার্মিজ অভিধানে ‘মগ’ নামে কোনো শব্দের উল্লেখ নেই। মিয়ানমারের অধিবাসীরা তাদের ‘তলইং’ নামে সম্বোধন করে।

চিত্র মারমা পুরুষ ও রমণী

মারমাদের বাসস্থান : পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতেই অধিকাংশ মারমা নৃগোষ্ঠীর বসবাস। কিছুসংখ্যক মারমা উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও পটুয়াখালীতে বাস করে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে মারমাদের সংখ্যা ছিল ১,৫৭,৩০১। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২,০২,৯৭৪ জন। ১৮

মারমাদের নৃগোষ্ঠীগত পরিচয় ও দৈহিক কাঠামো দৈহিক গড়নে মারমা নৃগোষ্ঠী মঙ্গোলয়েড শ্রেণিভূক্ত। তাদের গায়ের রং হলদে পীতাভ, চোখ ভাঁজযুক্ত ও পাতলা চোখের পাতা। তাদের চুল মোটা, কালো ও খাড়া (Leiotrichi) এবং পুরুষের মুখে দাড়ি-গোঁফ খুব কম মারমারা বলিষ্ঠ ও সুঠাম দেহের অধিকারী। মারমাদের পোশাক-পরিচ্ছদ মারমাদের পোশাক-পরিচ্ছদে বার্মিজ সংস্কৃতির প্রভাব অধিক পরিলক্ষিত হয়।

মারমা পুরুষের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হলো নিম্নাঙ্গে ‘দেয়াহ’ (ধুতি) এবং উত্তমাঙ্গে ‘আঙ্গি’। আঙ্গি হলো ফতুয়ার ন্যায় বুক ফাড়া, হাফহাতা জামা উৎসব অনুষ্ঠানে মারমা পুরুষ আঙ্গির উপর পরিধান করে বারিষ্টা। তারা মাথায় দুই ধরনের পাগড়ি ব্যবহার করে- ‘গবং’ এবং ‘চাফাহ’।

বাংলাদেশে বসবাসকারী নৃগােষ্ঠী এবং তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা

সচরাচর যে পাগড়ি পরিধান করে তা হলো গবং, আর উৎসব-অনুষ্ঠানে ধনী ব্যক্তি চাফাহ পরিধান করেন। মারমা রমণীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক হলো- নিম্নাঙ্গে থাবিং (থামি) এবং উত্তমাঙ্গে বেদাই আঙ্গি। অতীতে বক্ষবন্ধনী হিসেবে ‘রাংগাই’ ব্যবহার করত। বর্তমানে এর প্রচলন কম। মারমা রমণী থাবিং পরিধানের সময় চওড়া কাপড়ের কোমরবন্ধনী ব্যবহার করে, যা খাবাইং নামে পরিচিত। মাথায় পাগড়ির ন্যায় যে কাপড় বাঁধে তাকে গবং বলে। মারমারা জুমের কার্পাস তুলা দ্বারা চরকার মাধ্যমে সুতা কেটে কোমরর্তীতে কাপড় বুনে থাকে। তবে বর্তমানে মারমা মেয়েরা বাজার থেকে বার্মিজ থান কাপড় ক্রয় করে তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক তৈরি করে।

মারমাদের অলংকার মারমা রমণীরা অলংকার ভীষণ পছন্দ করে। মারমাদের ঐতিহ্যবাহী অলংকার হলো ‘লাকক’, ‘কুচি’, ‘হাতখাড়ু’, ‘বুড়াখাড়ু’, ‘লাপাইন’ (হাতের নানা প্রকার চুড়ি), ‘লইংদুক’ (ফাঁসহার), ‘লইংহৈ’ (নকশা করা রুপার মালা), ‘টেংগা লইংহৈ’ (পুঁতি ও মুদ্রার মালা), ‘খামো’ (কোমর বিছা) প্রভৃতি। এছাড়া রমণীরা মাথার চুলের খোঁপায় নানা রকম কাঁটা ব্যবহার করে মাথার চুল আটকানোর জন্য তারা কাঠের চিরুনি ব্যবহার করে আরোগ্য লাভ ও বিপদমুক্ত হওয়ার জন্য তারা তাবিজ ব্যবহার করে, যার নাম ‘লাকফোয়ে’। মারমা পুরুষরা রুপার তৈরি বিভিন্ন প্রকার বোতাম তাদের জামা ও আঙ্গিতে ব্যবহার করে। রমণীরা বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও অলংকার পরিধান করে।

গ) মগ/মারমা নৃ-গোষ্ঠীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারাঃ

মারমাদের সামাজিক উৎসব মারমাদের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব হলো ‘সাংগ্রাই’। চৈত্রের শেষ ও বৈশাখের শুরু উপলক্ষে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। মিয়ানমারের পঞ্জিকা দেখে মারমারা এ উৎসবের তারিখ নির্ধারণ করে। সাংগ্রাই উৎসবের প্রথম দিনে তরুণ-তরুণী সবাই মিলে বৌদ্ধ মন্দিরগুলো পরিষ্কার, নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করে ধর্মীয় শোভাযাত্রাসহকারে বৌদ্ধ মন্দিরে গমন, প্রদীপ জ্বালিয়ে সবার মঙ্গল কামনা ইত্যাদি থাকে। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দুপুরের খাবার ছোয়াইং দেওয়া হয়। পরবর্তী দুই দিন ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন প্রকার পিঠা ও উপাদেয় খাবার তৈরি করা হয়।

শেষ দিন ‘মৈত্রী পানিবর্ষণ’ সাংগ্রাই উৎসবের একটি বিশেষ দিক। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তরুণ-তরুণীরা মৈত্রী পানি ছিটিয়ে একে অপরের মঙ্গল কামনা করে। মৈত্রী পানি ছিটিয়ে প্রেমিক-প্রেমিকা পরস্পরকে হৃদয়ের কথা জানায়। এছাড়া এ উৎসবে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ, বলীখেলা প্রভৃতি চলে। মারমাদের ঐতিহ্যবাহী নাচের মধ্যে রয়েছে ‘পাঙখুং নাচ’ ও ‘জাইত নাচ’।

বাংলাদেশে বসবাসকারী নৃগােষ্ঠী এবং তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা

এসব নাচের জন্য তাদের নির্ধারিত পোশাক-পরিচ্ছদ আছে। মারমাদের অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ‘ওয়াছো’ (আশ্বিনী পূর্ণিমা), ‘ওয়াগ্যোয়াই’ (প্রবারণা পূর্ণিমা), ‘কাতিন পুই’ (চীবর দান), ‘ওয়াবহ’ (আষাঢ়ী পূর্ণিমা), মাঘী পূর্ণিমা প্রভৃতি। কাতিন পুই অনুষ্ঠানে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চীবর দান ও খাদ্য খাওয়ানো হয়। মারমারা খেলাধুলা খুব পছন্দ করে। তৈলাক্ত বাঁশে চড়ার প্রতিযোগিতা, বাঁশে চড়ে বালিশ খেলা, লাটিম খেলা, ঘিলা খেলা প্রভৃতি উৎসব-অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

মারমাদের অর্থনীতি, ভাষা ও শিক্ষা মারমাদের অর্থনৈতিক জীবনধারা আদিকাল থেকে পশু শিকার, পশুপালন, জুমচাষ প্রভৃতির উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে পশু শিকারের প্রবণতা কমে গেছে, অধিকাংশই কৃষিজমি চাষ ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে চাকরি করছে। মারমাদের পরিবারব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক। তারা তিব্বতি ভাষা পরিবারের ‘মগ্ধ’ (বার্মিজ) ভাষায় কথা বলে। শতকরা ৫৪.৮ ভাগ মারমা জনগোষ্ঠী এখনো শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ডিগ্রি এইচএসসি সার্টিফিকেট বা তদূর্ধ্ব ডিগ্রি অর্জন করেছে শতকরা মাত্র ০.৬ ভাগ এবং এসএসসি সার্টিফিকেট অর্জন করেছে শতকরা মাত্র ২.৩ ভাগ জনগোষ্ঠী।

খাদ্যাভ্যাস :

মারমাদের খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে রয়েছে বনজ শাকসবজি, কৃষিজ শাকসবজি, ভাত, মাছ, মাংস, শুঁটকি, ফলমূল প্রভৃতি। তাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় থাকে ‘নাপ্পি’ (শুঁটকির গুঁড়া)। নাপ্পি ও মরিচভর্তা ব্যবহার করে তারা যে সিদ্ধ সবজি রান্না করে তার নাম ‘ভোহজা’। উৎসব-পার্বণে তারা বিন্নি চাল দিয়ে মিষ্টি খাবার ও পিঠা তৈরি করে। এছাড়া উৎসবের খাদ্যতালিকায় থাকে ‘পাচন’ (পাঁচ রকম সবজি যারা তৈরি) ও ‘বিনি থমং’।

বিবাহব্যবস্থা :

মারমা সমাজে বিবাহের ক্ষেত্রে কুষ্ঠি গণনা করে পাত্র-পাত্রী ঠিক করা হয়। কুষ্ঠি গণনার কাজ করে থাকেন ‘ওহ্রাদাই’ (গণক)। মারমা সমাজে বিবাহ হচ্ছে একটি পবিত্র বন্ধন। বিবাহ ব্যতীত একজন পুরুষ ও নারীর শারীরিক সম্পর্ক অবৈধ। বিবাহের দিন বৌদ্ধ ভিক্ষুর মঙ্গলসূত্র পাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। বৌদ্ধ ভিক্ষু বর-কনেসহ আত্মীয়-স্বজনকে শীল প্রদান করেন। বিবাহের মূল ধাপ পরিচালনা করেন ‘মাদেছারা, যিনি বর-কনের ডান হাত মিলিয়ে বিবাহের পবিত্রতা ঘোষণা দেন। সদ্য বিবাহিত বর-কনেকে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও আমন্ত্রিত অতিথিগণ আশীর্বাদযুক্ত সুতা পরিয়ে সামাজিক বিয়ের স্বীকৃতি দান করেন। মারমা সমাজে বিধবা ও বিপত্নীক বিবাহের প্রচলন রয়েছে। মারমা নবজাতকের নামকরণ অনুষ্ঠান শিশু জন্মানোর পরে বাঁশের ছাঁচ দিয়ে নাভি কাটা হয় এবং আনন্দ উৎসবের আয়োজন করা হয়, যার নাম ‘সথমপীরে’। এ অনুষ্ঠানে শিশুর মঙ্গল কামনা করে পাড়া-পড়শিকে ভাত খাওয়ানো হয়। আবার শিশুর চুল ফেলার পর মা ও নবজাতকের মঙ্গল কামনা করে ‘মোদেতংপোয়ে’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আত্মীয় এবং প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হয়।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া:

মারমাদের মৃতদেহ সৎকারের জন্য দাহ ও সমাধিস্থ করা- এ দুই পদ্ধতিই প্রচলিত রয়েছে। সমাজের উচ্চস্তরের লোকদের দাহ করা হয়। নিচুস্তরের লোক ও অপমৃত্যু হলে কফিনে করে লাশ সমাধিস্থ করা হয়। সৎকারের পূর্বে ‘সইং আকা’ (এক প্রকার নৃত্য পরিবেশন করা হয়, যা মৃত ব্যক্তির লাশের সামনে করা হয়। এই নৃত্য শ্মশানে কিংবা উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে পরিবেশন করা হয়। মারমা শিশুদের মৃতদেহ সমাধিস্থ করা হয়। পুরুষ মারা গেলে তার বিধবা স্ত্রী চুল খোলা রেখে সৎকারের সামাজিক রীতি পালন করে। মারমা সমাজে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী মৃতের বুকের উপর ধাতব মুদ্রা, পায়ের দিকে ‘খোমজা’ ও মাথার দিকে জলভর্তি পাত্র রাখা হয়। এছাড়া মৃতের পাশে বসে বৌদ্ধধর্মবিষয়ক পুঁথি ‘নিংবাইলাহ’ পাঠ করা হয়। সাত দিন পর মৃত ব্যক্তির বাড়িতে বৌদ্ধ ভিক্ষু ডেকে তার আত্মার শান্তি কামনা করে মঙ্গলসূত্র পাঠ ও পাড়া-প্রতিবেশীকে ডেকে ভোজের আয়োজনের মধ্য দিয়ে সামাজিকতা পালন করা হয়। মারমা সমাজে এ ভোজকে ‘লাক্‌আপ্রেং ছোয়াই’ বলে, যার অর্থ হলো উল্টো হাতে রান্না করা ভোজ।

ঘ) মণিপুরি নৃ-গোষ্ঠীর উৎপত্তি ও পরিচয়ঃ

মণিপুরি (Monipuri)

মণিপুরিদের বাসস্থান ও উৎপত্তি বাংলাদেশে বসবাসরত নানা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে মণিপুরিরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এক অনন্য জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। এক সময় এই মণিপুরিরা ভারতের বৃহত্তর আসাম রাজ্যের পাদদেশে অবস্থিত বরাক নদীর অববাহিকায় স্বাধীন মণিপুর রাজ্যের অধিবাসী ছিল। আঠারো শতকে মণিপুরের রাজা ভাগ্যচন্দ্র জয় সিং যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আত্মরক্ষার জন্য কাছাড় জেলায় চলে আসেন রাজার সাথে আরও অনেক মণিপুরি সিলেট, ত্রিপুরা প্রভৃতি জেলায় এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। বর্তমানের মণিপুরিরা ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছে। তারা বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের সমভূমিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে।

চিত্র নৃত্যরত মণিপুরি রমণী

মণিপুর রাজ্যের অধিবাসী ছিল বলেই তারা মণিপুরি নামে পরিচিত। পৌরাণিক কাহিনিতে মণিপুর রাজ্যের নামকরণ নিয়ে একটি কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। এ কাহিনি অনুসারে শিব-পার্বতীর রাসলীলা অনুষ্ঠানের স্থানটি নাগদেবতা অনন্তনাগ মাথার মণির সাহায্যে আলোকিত করেন। এ কারণে স্থানটির নাম রাখা হয় মণিপুর। জে. শেক্সপিয়র মণিপুরি জাতিকে আসামের কুকিদের অন্তর্ভুক্ত জাতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

কেননা কুকিদের উৎপত্তি সম্পর্কিত পৌরাণিক কাহিনির সঙ্গে মণিপুরিদের বংশোদ্ভবের পুরাকাহিনির হুবহু মিল পরিলক্ষিত হয়। এ কাহিনি অনুসারে মণিপুরিদের পূর্বপুরুষ পাখাংবা ছিলেন এক সর্পপুরুষ। তিনি বেরিয়ে এসেছিলেন অরণ্য অভ্যন্তরের একটি বিরাট গর্ত (খুরপুই) থেকে। একবার তিনি সুপুরুষ যুবকের বেশ ধরে জুমক্ষেতে কর্মরত এক নারীকে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হন। অবশেষে তাকে বিয়ে করে সংসারজীবন শুরু করেন। তাদের থেকেই মণিপুরি জাতির উৎপত্তি। নৃবিজ্ঞানী হডসনের মতে, একই পিতার তিন সন্তান থেকে নাগা, কুকি ও মণিপুরি জাতির উৎপত্তি হয়েছে।

মণিপুরিদের নৃগোষ্ঠীগত পরিচয় ও দৈহিক কাঠামো নৃবিজ্ঞানী ও ভাষাতত্ত্ববিদগণের মতে, মণিপুরিদের দৈহিক বৈশিষ্ট্যাবলির সঙ্গে চীনা ও বার্মিজ জাতির অনেক মিল রয়েছে। এ কারণে তাদের আদি-মঙ্গোলীয় নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করা হয়। মণিপুরিদের গাত্রবর্ণ বাদামি বা ফর্সা, নাক কিঞ্চিৎ প্রশস্ত, চোখ ছোট, চোখের মণি নীলাভ, পায়ের গোড়ালি মোটা, দেহের উচ্চতা মাঝারি মাথা লম্বাকৃতির, মুখাকৃতি সাধারণত সরু ও লম্বাকারের, ঠোঁট প্রধানত পাতলা, দেহ সুঠাম ও বলিষ্ঠ। তাদের দাড়িগোঁফ আছে এবং দেহে লোমের প্রাচুর্য রয়েছে।

গোত্র ও ভাষা :

মণিপুরিদের প্রধান দুটি গোত্র হলো- বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি এবং মৈতৈ মণিপুরি। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিদের ভাষা হলো ইন্দো-এশিয়ান এবং মৈতৈদের ভাষা হলো তিব্বতি-বর্মণ ভাষা শ্রেণির অন্তর্গত। মণিপুরিদের নিজস্ব ভাষা ও বর্ণমালা রয়েছে। তাদের প্রচলিত ভাষার নাম মৈথয়ী বর্তমানে তারা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে।

ধর্ম ও বিবাহব্যবস্থা :

মণিপুরিরা হিন্দুধর্মাবলম্বী। তবে তারা বৈঞ্চব সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত। পূজা পার্বণে তারা হিন্দুদের ন্যায় ব্রাহ্মণ পুরোহিত নিযুক্ত করে থাকে। তাদের দেবমন্দিরে তিন ধরনের মূর্তি লক্ষ করা যায়। যেমন- শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ, শ্রীশ্রী জগন্নাথ বিষ্ণু এবং শ্রীশ্রী গৌরাঙ্গ। এছাড়া মণিপুরি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য ভিলবগ্রহণ অপরিহার্য। তবে কুমারী নারীর তিলবগ্রহণের ক্ষেত্রে শিথিলতা রয়েছে। মণিপুরিরা বহির্গোত্র বিবাহভিত্তিক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। কেননা তাদের মধ্যে একই গোত্রে বিবাহ নিষিদ্ধ। অন্যান্য ক্ষুদ্র মৃগোষ্ঠীর ন্যায় মণিপুরি সম্প্রদায়ের মধ্যেও বিবাহকে ঘিরে কতিপয় নিজস্ব আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে, যার মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন হয় তাদের সমাজে বিধবা বিবাহ প্রচলিত, তবে তাদের মধ্যে বাল্যবিবাহের প্রচলন নেই। মণিপুরি সমাজে বিবাহবিচ্ছেদের প্রচলন আছে। তবে তালাকপ্রাপ্ত রমণীকে স্বামীর গৃহ ত্যাগ করার সময় রীতি মোতাবেক তার পানি পানের পাত্র ও কটিদেশের পোশাক রেখে আসতে হয়।

পরিবার ও উত্তরাধিকার ব্যবস্থা :

অতীতে মণিপুরি সমাজে যৌথ পরিবারব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল, বর্তমানে অধিকাংশই অণু পরিবার। তাদের সমাজে পিতৃতান্ত্রিক পরিবারব্যবস্থা চালু রয়েছে। পিতার অবর্তমানে মাতা, দাদা বা বড় ছেলের উপর দায়িত্ব অর্পিত হয়। পিতার সম্পত্তিতে পুত্রসন্তানগণ সমান ভাগ পায় তবে কন্যাসন্তানদের পিতার সম্পত্তিতে কোনো অধিকার নেই। কিন্তু দত্তক পুত্রসস্তানও সম্পত্তিতে সমান ভাগ পায়।

ঙ) মণিপুরি নৃ-গোষ্ঠীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারাঃ

মণিপুরিদের জীবিকা ব্যবস্থা মণিপুরিরা কৃষির উপর ভিত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করে। পাহাড়ি এলাকার মণিপুরিরা জুমচাষ এবং সমতলের অধিবাসীরা কৃষিজমিতে চাষাবাদ করে। তাদের পুরুষের তুলনায় নারীরা অধিক পরিশ্রমী হয়। নারী-পুরুষ উভয়েই একত্রে মাঠে কাজ এবং হাটবাজারে বেচাকেনা করে থাকে। এছাড়া নারীরা কাপড় বুনন থেকে শুরু করে সাংসারিক যাবতীয় কাজকর্ম নিজেরাই সম্পাদন করে থাকে। বর্তমানে

শিক্ষিত মণিপুরিরা চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। তাদের সমাজে কোনো ভিক্ষুক নেই। মণিপুরিদের খাদ্যাভ্যাস মণিপুরিদের প্রধান খাদ্য হলো ভাত, ডাল, মাছ ও শাকসবজি। তাদের সমাজে মদ ও মাংস নিষিদ্ধ। তারা তরকারিতে তেল ও গরম মসলার ব্যবহার কম করে নিজস্ব উৎপাদিত মসলা পাতা অধিক ব্যবহার করে। তাদের প্রিয় খাদ্যের মধ্যে রয়েছে মসলা পাতা দিয়ে তৈরি সালাদ (সিঞ্চৌ), চ্যাপা শুঁটকির ভর্তা (পান্তেই), বাঁশের কচি কোড়ল ও কলাগাছের থোড় দিয়ে রান্না তরকারি।

মণিপুরিদের পোশাক-পরিচ্ছদ মণিপুরি পুরুষরা নিম্নাঙ্গে ধৃতি ও লুঙ্গি পরিধান করে। রমণীরা বুক আবৃত করে নিম্নাঙ্গ ঢেকে যে পোশাক পরিধান করে তাকে ‘লাহিং’/’নাগ পোশাক’/’চাকসাবী’ বলা হয়। মণিপুরি নারীরা এ পোশাককে খুব গৌরবময় ও পবিত্র মনে করে। এ ছাড়া তারা উত্তমাঙ্গে ‘আহিঙ’ (ব্লাউজের ন্যায় পরিধান করে। বর্তমানে অবশ্য তারা আধুনিক পোশাক শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ পরিধান করছে। অনুরূপভাবে পুরুষরা পায়জামা-পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, গেঞ্জি প্রভৃতি পরিধান করছে। মণিপুরি নারীরা অলংকার পরতে পছন্দ করে। তারা হাত, কান, গলা, নাক ও পায়ে অলংকার পরিধান করে। এ ছাড়া হাতের আঙুলে আংটি এবং সিঁথিতে তারা সীতা (টিকলি) পরিধান করে মণিপুরি নারীরা কপালে টিপ, সিঁথিতে সিঁদুর ও হাতে শঙ্খ ব্যবহার করে এবং খোঁপায় বিভিন্ন প্রকার তাজা ফুল শুঁজে রাখে।

মণিপুরিদের সংস্কৃতি :

মণিপুরি সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে পূজা-পার্বণ এবং বিবাহসহ সব সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নৃত্যগীত পরিবেশনা। নৃত্যগীত সম্পর্কে মণিপুরিদের মধ্যে কতগুলো ধর্মীয় সংস্কার রয়েছে। তারা বিশ্বাস পোষণ করে, পৃথিবী সৃষ্টির মূলে রয়েছে নৃত্যের অবদান। এছাড়া তারা বিশ্বাস করে, একমাত্র নৃত্যের গুণেই সংসারে সব কাজে সফলতা আসে, নৃত্যের মধ্যেই রয়েছে জীবনের সকল সারবস্তু (Essence of life)। তাই নৃত্যকে তারা অতি পবিত্র মনে করে। মণিপুরি নৃত্যের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ‘লাইহারাউবা’, যা দেবতাদের সন্তুষ্টি সাধনের উদ্দেশ্যে পরিবেশিত হয়।

এ নৃত্য চৈত্র মাসের শেষে ও বৈশাখের শুরুতে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। মণিপুরি সমাজের আরেকটি উল্লেখযোগ্য নৃত্য হলো রাসনৃত্য। এ নৃত্যের মূলভাব প্রেমলীলা, যা বিভিন্ন ধরনের হয়। যেমন- মহারাস, বসন্তরাস, নিত্যরাস, কুব্জরাস, গোপরাস, উলুখ-রাস, দিবারাস প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য বৃন্দাবনের রাধা-কৃষ্ণের রাসলীলার অনুকরণে রাজা ভাগ্যচন্দ্র জয় সিং মণিপুরি সমাজে রাসলীলার প্রবর্তন করেন। মণিপুরি সমাজের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নৃত্য হলো থাবল চোংবী নৃত্য। বসন্ত পূর্ণিমায় এ নৃত্য পরিবেশিত হয়। মণিপুরি নৃত্যে ব্যবহৃত পোশাক পরিচ্ছদ খুবই রুচিশীল ও দৃষ্টিনন্দন মণিপুরি নৃত্য শুধু বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেনি, আন্তর্জাতিক খ্যাতিও অর্জন করেছে।

বাংলাদেশে বসবাসকারী নৃগােষ্ঠী এবং তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা

মণিপুরিদের সামাজিক উৎসব ও আচার-অনুষ্ঠান মণিপুরিদের সবচেয়ে বড় সামাজিক অনুষ্ঠান হলো কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উদ্‌যাপিত রাসোৎসব (মহা রাসলীলা)। প্রতি উৎসব পঞ্জিকায় বর্ণিত তিথি মোতাবেক নির্দিষ্ট তারিখে এ উৎসব উদ্‌যাপন করা হয়। এছাড়া তাদের সমাজের অন্যান্য উৎসব অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- বিজু উৎসব (চৈত্রসংক্রান্তি), সংক্রান্তি উৎসব (পৌষ পার্বণ), দোলযাত্রা (হোলি উৎসব), জন্ম উৎসব, রথযাত্রা, নোয়াভাত থানা (নবান্ন উৎসব), শিব চতুর্দশী উৎসব প্রভৃতি। এ অনুষ্ঠানগুলোর প্রতিটিতে মহাসমারোহে নৃত্যগীত ও বাদ্যযন্ত্রের আয়োজন করা হয়।

তাদের অন্যতম বাদ্যযন্ত্র হলো ‘মৃদঙ্গ’ ও মঞ্জিলা মণিপুরি নবজাতকের জন্য কৃত আচার-অনুষ্ঠান মণিপুরি সমাজে কোনো পরিবারে সন্তান-সন্ততি জন্মগ্রহণ করলে তারা খুব খুশি হয়। নবজাতকের জন্ম উপলক্ষে তিন পর্বের অনুষ্ঠান করা হয়। সন্তান জন্মের তিন দিনের দিন করা হয় ‘চিপার ভাত খানা’ অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে বেজোড় সংখ্যক শিশুকে ভাত খাওয়ানো ও অর্থ প্রদান এবং ধাত্রীকে পারিশ্রমিকের অর্থ বা ধান দেওয়া হয়। আর ৬ দিনের দিন করা হয় ‘ষষ্ঠী পৰ্ব’, যা পঞ্জিকায় বর্ণিত তিথির শুভলগ্নে পূজার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তবে এ অনুষ্ঠানের বিশেষ দিক হলো নবজাতকের মামা সম্পর্কীয় একজন আত্মীয় দ্বারা ঘরের বিভিন্ন কোনায় ‘কার’ (তীর) ছোড়া। অতঃপর ১২ দিনের দিন করা হয় ‘সেংপা’ পর্ব, যা মূলত নবজাতকের মাথামুণ্ডন ও প্রসূতির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে পালিত হয়।

মণিপুরিদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া :

মণিপুরি সমাজে মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তিকে দীক্ষাগুরু দ্বারা ‘দানধর্ম’ কার্য সম্পাদন করা হয়। মৃতদেহ সৎকারে দাহ করা হয়। কিন্তু তিন বছরের কম বয়সী শিশুর মৃতদেহ মাটির হাঁড়িতে বা টিনের পাত্রে ভরে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে ধারাবাহিক আচার-অনুষ্ঠান করা হয়। মৃত্যুর চতুর্থ দিনে অস্তি সঞ্চার পর্ব, দ্বাদশ দিনে ঘরসেংপা, ত্রয়োদশ দিনে সল্লা পর্ব এবং চতুর্দশ দিনে শ্রাদ্ধ পর্ব সম্পাদন করা হয়। মণিপুরি সমাজে মৃত ব্যক্তির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সংক্রান্ত কৃত্যকর্মের ক্ষেত্রে গ্রামবাসী ও পরগনাবাসী নির্ধারিত হারে চাঁদা দেয় এবং সবাই অংশগ্রহণ করে।

এই ছিল তোমাদের এইচএসসি ২০২১ ৬ষ্ঠ সপ্তাহ সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান/ উত্তর- বাংলাদেশে বসবাসকারী নৃগােষ্ঠী এবং তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা।

আরো দেখুন-

প্রতি সপ্তাহে সকল স্তরের অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত সকল তথ্য পাওয়ার জন্য বাংলা নোটিশ এর ফেসবুক পেজটি লাইক এবং ফলো করে রাখুন ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন এবং প্লেস্টোর থেকে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড করে রাখুন।

আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নোটিশ ডট কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক জনাব আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া। জন্ম ১৯৯৩ সালের ২০ নভেম্বর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায়। বাবা আবদুল গফুর ভূঁইয়া এবং মা রহিমা বেগম। এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে আবদুল্লাহ আল আরিয়ান বয়স ৫ বছর। মেয়ে ফাবিহা জান্নাত বয়স ১ বছর। আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া এর শিক্ষাজীবন আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে ম্যানেজমেন্ট এ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি উত্তরা ইউনিভার্সিটি ঢাকা থেকে বিপিএড সম্পন্ন করেন। আজিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু। এরপর আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ লাকসাম উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কিছুদিন ক্লাস করার পর। পারিবারিক কারণে নাঙ্গলকোট হাসান মেমোরিয়াল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজ এ কিছুদিন রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করার পর ভালো না লাগায় পুনরায় ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ছাত্র জীবনে তিনি নানা রকম সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। কর্মজীবন কর্মজীবনের শুরুতে তিনি আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় যোগদেন। বেশ কিছুদিন পর তিনি ২০১৯ সালে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় কুয়েত পারি জমান। কিন্তু সেখানকার কাজের পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় পুনরায় আবার বাংলাদেশে ফিরে এসে পূর্বের পদে কাজে যোগদান করে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি স্বপ্ন গ্রাফিক্স এন্ড নেটওয়ার্ক নামে একটি মাল্টিমিডিয়া এবং প্রিন্টিং প্রেস প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধীকারী সেই সাথে স্বপ্ন ইশকুল নামক একটি কম্পিউটার ট্রেণিং ইনস্টিটিউট এর মালিকানায় আছেন যেখানে তিনি নিজেই ক্লাস পরিচালনা করেন। লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্ম ছাত্র অবস্থায় তিনি লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্মের সাথে জড়িত আছেন। ২০১১ সালে রাইটার্স এসোসিয়েশন এর ম্যাগাজিনে তার প্রথম লেখা বন্ধু চিরন্তন প্রকাশিত হয়। এর পর তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

অ্যাডস্ ব্লকার পাওয়া গেছে!

দয়া করে আমাদের সাপোর্ট করার জন্য আপনার এডস্ ব্লকার ডিজেবল করে পেইজটি রিলোড করুন! ধন্যবাদ